ফেসবুক জানা অজানা পর্ব-৫
ফেসবুক জানা অজানা পর্ব-৫
টপিকঃ ফেসবুক ফটো কন্টেন্ট
আমরা যারাই অনলাইন বিজনেসের কথা চিন্তা করি তাদের প্রায় সবাই প্রথমে যেটা দিয়ে শুরু করি সেটা হলো ফেসবুক পেইজ। আর এই ফেসবুক পেইজের মাধ্যমেই আমরা আমাদের প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সেলস এর জন্য বুস্ট করে থাকি। কিন্তু এই বুস্টিং এর ক্ষেত্রেই অনেকের একটা ধারণা রয়েছে যে যত বেশি ডলার বা টাকা বুস্টিং এর পেছনে খরচ করবে তার তত বেশি সেল হবে। কিন্তু এই ধারণাটিতে একটা বড় ধরণের ভুল রয়েছে। কারণ আমরা যখন বুস্টের জন্য ফেসবুককে ডলার বা টাকা দেই তখন ফেসবুক আমাদের এই নিশ্চয়তা দেয় যে কত মানুষের কাছে সে পোস্টটি পৌঁছে দিবে কিন্তু এই নিশ্চয়তা দেয়না যে কতটা অর্ডার আসবে বা কতটা সেলস আসবে, আর এটা দেয়া সম্ভব ও না। তাহলে বুস্ট করার পর অর্ডার আসবে কী আসবেনা তা নির্ভর করে কীসের উপর? আসলে বুস্ট করার পর অর্ডার কী পরিমাণ আসবে বা সেলস কী পরিমাণ হবে তা নির্ভর করে কয়েকটি বিষয়ের উপর। মূল আলোচনায় বিস্তারিত বলা হবে।
শুরুতে বলছিলাম বুস্টিং সেল কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। সেগুলো হচ্ছে-
🗼সেলস পোস্টের টেক্সট কন্টেন্ট
🗼সেলস পোস্টের গ্রাফিক্যাল কন্টেন্ট
🗼প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের ইউনিকনেস
🗼টার্গেট অডিয়েন্স এনালাইসিস
🗼 প্রোপার টার্গেট অডিয়েন্স সেট করা
সাধারণত আপনার বুস্ট করা পোস্টটি সাধারণ ফেসবুক ইউজার বা আপনার সম্ভাব্য ক্রেতাদের নিউজফিডে স্পন্সর্ড পোস্ট হিসেবে দেখায় যখন তারা তাদের নিউজফিড স্ক্রল করে। কিন্তু একজন ইউজার বা আপনার সম্ভাব্য ক্রেতা স্ক্রলিং থামিয়ে আপনার সেলস পোস্টটি পড়বে কী পড়বেনা তা অনেকাংশেই নির্ভর করে। আপনি নিজের কথায় চিন্তা করে দেখুন না আপনি কী আপনার নিউজফিডে আসা সব স্পন্সর্ড পোস্ট পড়ে দেখেন? এর উত্তর স্বাভাবিকভাবেই আমাদের সবার কাছে “না”। কিন্তু মানুষ সেই পোস্টগুলোই সাধারণত স্ক্রল করা থামিয়ে পড়ে দেখে যেগুলোর গ্রাফিক্যাল কন্টেন্ট তাকে আকৃষ্ট করতে পারে। আর এই গ্রাফিক্যাল কন্টেন্ট ভালো হলে কম ডলার খরচ করেও অনেক বেশি পরিমাণ রিচ এবং এনগেইজমেন্ট পাওয়া যায় যেটা দিনশেষে সেলস বাড়িয়ে দেয়।
ফটো বা ইমেজ কন্টেন্টের টেকনিক্যাল ব্যাপার
🖊 ফটো সাইজ এবং রেজল্যুশনঃ
ফেসবুক এডের জন্য বা আমরা যে সেলস পোস্টটা সাজাবো তার ফটো সাইজের ক্ষেত্রে ফেসবুকের কিছু টেকনিক্যাল গাইডলাইন রয়েছে। যেমনঃ ফেসবুকের এড ইমেজ গাইড লাইন অনুসারে ফটো সাইজ রেশিও হওয়া উচিত ১.৯১ : ১ থেকে ৪ : ৫ পর্যন্ত এবং রেজল্যুশনের ক্ষেত্রে যত বেশি রেজল্যুশনের ছবি সম্ভব ইউজ করা উচিত। এছাড়াও ফটো JPG অথবা PNG ফরমেটে আপলোড করা উচিত।এছাড়াও ল্যান্ডস্ক্যাপ ইমেজের ক্ষেত্রে রিকমেন্ডেড সাইজ বা ডাইমেনশন হলো ১২০০ * ৬২৮ পিক্সেল তবে চাইলে স্কোয়ার ডাইমেনশনের ফটো ও ইউজ করা যেতে পারে। তবে যে শেপেরই করা হোকনা কেন যেকোনো দিকের জন্যই মিনিমাম ডাইমেনশন হওয়া উচিত ৬০০ পিক্সেল এবং এই ফটো সাইজের উপর অনেকক্ষেত্রেই আপনার বুস্টের রেজাল্ট নির্ভর করতে পারে তাই সঠিক ডাইমেনশনের ইমেজ ইউজ করুন, প্রয়োজনে প্রফেশনাল কারো হেল্প নিন।
🖊ইমেজ টেক্সটঃ
আমাদের মাঝে মধ্যেই ইমেজের মধ্যে বিভিন্ন লেখা ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরার জন্য বা কাস্টমারকে আকৃষ্ট করার জন্য। কিন্তু ফেসবুকের এড গাইডলাইনের রিকমেন্ডেশন অনুযায়ী ইমেজে খুব বেশি টেক্সট বা ২০% এর বেশি টেক্সট ইউজ করা উচিত নয়। কারণ এক্ষেত্রে বুস্টে রিচ কম হওয়ার পসিবিলিটি থাকে বলে ফেসবুকে এড গাইডলাইনে উল্লেখ রয়েছে। তাই পুরো ইমেজ জুড়ে না লিখে ইমেজের যেকোনো অংশ সুন্দরভাবে এবং স্পষ্টভাবে আপনার লেখাটি ফুটিয়ে তুলুন।
এবার আসুন কিছু স্ট্র্যাটেজিক্যাল ব্যাপার জেনে নেই যেগুলো ইমেজ কন্টেন্ট বা ফটো কন্টেন্টে প্রয়োগ করা উচিতঃ
1️⃣ ক্লিয়ার ইমেজঃ
আপনার ব্যবহার করা ছবিগুলো এমন হতে হবে যেন সেটা মানুষকে আকৃষ্ট করে এবং তারা তাদের নিউজফিড স্ক্রলিং করা থামায় এবং আপনার সেলসপোস্টটি পড়ে দেখে। আর সেজন্য যে ছবিগুলো ইউজ করবেন সেগুলো যেন ক্লিয়ার হয় এবং সঠিক রেজল্যুশনের হয় তা লক্ষ্য রাখবেন কারণ মানুষ ব্লার বা ঝাপ্সা কিছু দেখতে পছন্দ করেনা।
2️⃣ প্রোডাক্ট কোড এবং লোগো এড করুনঃ
সেলস পোস্টে দেয়া ছবিগুলোতে প্রোডাক্ত কোড ইউজ করুন যেনো মানুষ সহজেই কোড মেসেজ করে অর্ডার করতে পারে। সবসময়েই একটা বিষয় আমাদের মনে রাখা উচিত যে ক্রেতাকে আমরা যত সহজে অর্ডারের সুযোগ দিতে পারবো অর্ডার তত বাড়েবে এবং ছবিগুলোতে আপনার লোগো বসিয়ে দিন যেকোনো এক কর্ণারে যেনো সুন্দরভাবে দেখা যায়। তবে অনেককে দেখা যায় প্রোডাক্টের ছবির উপর মাঝখানে লোগো বসিয়ে দেন যেটা মোটেও প্রফেশনাল নয় এবং ক্রেতাদের জন্য তা বিরক্তিকর। তাই লোগোর PNG বা ট্রান্সপারেন্ট ফাইলটি ইউজ করে আপনার প্রোডাক্টের ছবিতে আপনার ব্র্যান্ডের লোগো বসিয়ে নিন এটা ব্র্যান্ডিং এর ক্ষেত্রে অনেক বেশি হেল্পফুল হয়।
3️⃣ মডেল ফটোগ্রাফিঃ
এটা মূলত যারা পোশাক এবং অলংকার নিয়ে কাজ করছেন তাদের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র প্রোডাক্টের ছবি দেখার চেয়ে যখন একজন ক্রেতা দেখে কেউ একজন তা পরে আছে এবং তাকে সেটাতে সুন্দর লাগছে তখন সে নিজেকেও ঐ জায়গায় কল্পনা করে এবং ধরে নেই সে পরলেও তা সুন্দর দেখাবে এবং প্রোডাক্টটা অর্ডার করার জন্য সে মোটিভেটেড হয় এবং এটা খুবই স্বাভাবিক একটি সাইকোলজিক্যাল বিষয়।
4️⃣ফটো এঙ্গেল এবং ব্যাকগ্রাউন্ডঃ
ক্যামেরার ছবি তোলার এঙ্গেল যেকোনো ছবির অর্থই পরিবর্তন করে দিতে পারে তা আমরা মাঝে মধ্যে বিভিন্ন ফানি বা ট্রল টাইপ ইমেজগুলোতে দেখে থাকি। তাই এমন এঙ্গেলে প্রোডাক্টের ছবি তুলুন যেনো তা ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে এবং প্রোডাক্টের ছবি তোলার জন্য সুন্দর একটি ব্যাকগ্রাউন্ড ইউজ করুন যদিও চাইলে এডিট করেও সুন্দর ব্যাকগ্রাউন্ড ইউজ করতে পারেন। প্রয়োজনে এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ কারো হেল্প নিন। কারণ অনলাইনের ক্রেতারা প্রথমে আপনার প্রোডাক্ট কোয়ালিটি দেখার সুযোগ পায়না বরং আপনার প্রোডাক্টের আউটলুক টা দেখার সুযোগ পায় তাই আর সেটা নির্ভর করে ফটোগ্রাফি এবং তার প্রফেশনাল এডিটের উপর। তবে এডিট করে পন্যের মূল কালার চেইঞ্জ করে ক্রেতাদের মিসগাইড করা থেকে বিরত থাকুন কারণ দিন শেষে এটা আপনার ব্র্যান্ডিং এর জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
একটা সেলস পোস্টের জন্য ফটো কন্টেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটা দেখেই মানুষ আপনার প্রোডাক্ট পছন্দ করবে এবং অর্ডার করবে তাই আপনার সেলস পোস্টের ফটো কন্টেন্টকে যতটা সম্ভব আকর্ষণীয় করে তুলুন কারণ বুস্টের জন্য খরচ করা ডলার বা টাকাগুলো যেন শুধুমাত্র গ্রাফিক্যাল কন্টেন্টের কারণে জলে না যায়। একটা বিজনেসকে প্রফেশনালি লং টার্মে চালানোর জন্য অনেক বিষয়ে খেয়াল করতে হবে, নচেৎ ব্রান্ডিং করা সম্ভব হয় না। তাই প্রয়োজনে প্রফেশনাল কারো হেল্প নিয়ে হলেও গ্রাফিক্যাল কন্টেন্টকে আকর্ষনীয় করে তুলুন।
আজ এ পর্যন্তই সামনে আবারও কথা হবে নতুন কোন বিষয় নিয়ে। মার্কেটিং সহ যে কোন প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাকে সেবা দেওয়ায় আমার লক্ষ্য।
🔗FOLLOW ME:
Facebook (Page): Nayem Hossain
Facebook (ID): Nayem Hossain
Instagram: Nayem Hossain
E-mail: Personal.nayem2022@gmail.com
Website: Nayemhossainofficial.blogspot.com
কোন মন্তব্য নেই